ইহুদি জাতির ইতিহাস শেষ পর্ব: যেভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ইজরায়েল




ইহুদি জাতির ইতিহাসের শেষ পর্বে আপনাদের স্বাগতম। বহু বছরের নিপীড়ন আর বাস্তুচ্যুতির পর ইহুদিরা আধুনিক যুগে প্রবেশ করে। শিল্প বিপ্লব আর এনলাইটমেন্ট যুগে প্রবেশ করার কারণে ধীরে ধীরে ইহুদিদের মধ্যে ইহুদি জাতিয়তাবাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। আর এখান থেকেই শুরু হয় জায়োনিজম আন্দোলন। জায়োনিজম, অর্থাৎ ইহুদি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, মূলত উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে গঠিত হলেও এর শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। ইহুদি জাতি প্রাচীন প্যালেস্টাইনে বারবার বিদ্রোহ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের জাতীয় পরিচয় রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। ইহুদিদের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে পরের সাবাত তারা জেরুজালেমে পালন করবে।

উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে, যেখানে প্রতিটি জাতি রাষ্ট্র নির্মাণের চিন্তায় উদগ্রীব। ইহুদি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও প্রশ্ন জাগে "আমরাও যদি একটি জাতি হই, তাহলে আমাদের কেন রাষ্ট্র নেই?" এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বহু চিন্তাবিদ যেমন লিও পিন্সকার, মোজেস হেস, আদাম্সকি, ও পরবর্তীতে নাথান বিয়ার্নবাউম, জায়োনিজমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৮৮৩ সালে, নাথান বিয়ার্নবাউম মাত্র ১৯ বছর বয়সে ভিয়েনায় "কাদিমাহ" নামক প্রথম ইহুদি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং "জায়োনিজম" শব্দটির ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি "Auto-Emancipation" নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন যেখানে যুক্তি দেন, ইউরোপে ইহুদি অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তাদের আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হবে নিজের ভূমিতে ফিরে গিয়ে।

এ সময়েই এক ভয়াবহ ঘটনায় ইউরোপীয় ইহুদি চেতনায় নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যা ড্রেফুস কেলেঙ্কারি (১৮৯৪) নামে পরিচিত। ফ্রান্সের একজন ইহুদি সেনা অফিসার, আলফ্রেড ড্রেফুস, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন কেবল তাঁর ইহুদি পরিচয়ের কারণে। পরে প্রমাণ হয় তিনি নির্দোষ, কিন্তু সেই সময় ফ্রান্সের সমাজে ইহুদি-বিরোধী মনোভাব এতটাই গভীর ছিল যে, তাঁকে বিচারের সুযোগ না দিয়েই অভিযুক্ত করা হয়। এই ঘটনাটি গভীরভাবে নাড়া দেয় থিওডর হার্জল-কে,  যিনি ছিলেন একজন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয় সাংবাদিক ও চিন্তাবিদ, এবং পরবর্তীতে পরিচিত হন "আধুনিক রাজনৈতিক জায়োনিজমের জনক" হিসেবে।

১৮৯৬ সালে হার্জল লেখেন তাঁর যুগান্তকারী পুস্তক "Der Judenstaat" (ইহুদি রাষ্ট্র), যেখানে তিনি যুক্তি দেন, ইহুদিদের সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো একটি স্বতন্ত্র ইহুদি রাষ্ট্রের সৃষ্টি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় সমাজে ইহুদি বিদ্বেষ এতটাই গোঁড়ামিতে ভরা যে, ইহুদিরা কখনো সেখানে নিরাপদ হতে পারে না। এই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সুইজারল্যান্ডের বেজেল শহরে ১৮৯৭ সালে থিওডর হার্জল এবং নাথান বিয়ার্নবাউম একত্রে আয়োজন করেন প্রথম জায়োনিস্ট কংগ্রেস । সেখানে প্রণীত হয় "বেজেল প্রোগ্রাম", যার মূল বক্তব্য ছিল:

"জায়োনিজমের লক্ষ্য হলো প্যালেস্টাইনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি আইন-স্বীকৃত আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা।"

এই লক্ষ্য পূরণে চারটি প্রধান কৌশল নির্ধারণ করা হয়:

·       ইহুদি কৃষক, কারিগর ও শিল্পীদের প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপনের প্রস্তাব

·       বিশ্ব ইহুদি সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা

·       ইহুদি জাতীয় চেতনা জাগ্রত ও সংরক্ষণ করা

·       আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রীয় সমর্থন আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু

প্রথমদিকে জায়োনিস্টরা একটি দ্বি-জাতিক বা বহু-জাতিক কাঠামোর চিন্তা করলেও, আরব জনগণ স্বাভাবিক ভাবেই তাদের নিজেদের ভূমিতে একদল ইউরোপিয়ানের এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ মেনে নেয়নি। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় জোর করেই ইহুদি রাষ্ট্র করা হবে। শুরু হয় ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইহুদি শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে প্যালেস্টাইনে ইহুদি অভিবাসনের প্রথম ঢেউ এসে পড়ে[, যাকে ইহুদিরা বলে প্রথম আলিয়া।  তবে এতে খুব বেশি ইহুদি সাড়া দেয়নি। তবে ১৯০৩ সালে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে ইহুদি বিরোধী সহিংসতা, বিশেষ করে কিশিনেভের দাংগা ইহুদি যুবসমাজকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। তারা বুঝতে পারে, ইউরোপ তাদের জন্য আর নিরাপদ নয়, এবং একমাত্র প্যালেস্টাইনে একটি স্বনির্ভর ইহুদি সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। এই তরুণরা ছিলেন আদর্শবাদী ও সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্দীপ্ত; তারা কৃষিকাজ, কনসাট্রাকশন ও সাংগঠনিক কাজে পারদর্শী ছিলেন। এ সময় তারা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় নতুন শহর গড়ে তুলতে শুরু করেন, যেমন ডেগানিয়া, কিববুতজ, এবং তেল আভিভ । তারা প্যালেস্টাইনের মরু ও পাথুরে জমিকে উর্বর কৃষিভূমিতে পরিণত করেন। একই সঙ্গে এলিয়েজার বেন-ইয়েহুদার নেতৃত্বে হিব্রু ভাষার পুনরুজ্জীবন ঘটে এবং তারা সকল কাজে হিব্রু ব্যবহার শুরু করে। তবে ১ম বিশযুদ্ধ তাদের জন্য বিশাল আর্শীবাদ হয়ে আবে।

১৯১৭ সালে, বিশ্বযুদ্ধের মাঝে বেলফোর ঘোষণা (Balfour Declaration) প্রকাশিত হয়, যেখানে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে যে তারা "প্যালেস্টাইনে ইহুদি জাতির জন্য একটি আবাসভূমি" প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করবে। এই ঘোষণাটি ছিল জায়োনিস্টদের এক ঐতিহাসিক বিজয়, যা তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ খুলে দেয়। আরব সম্প্রদায় একে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখে, কারণ একই সময়ে ব্রিটিশরা আরবদেরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আশ্বাস দিয়েছিল। এর ফলে প্যালেস্টাইনে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এই পর্যায়ে আমরা আরেকটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আলোকপাত করতে চাই।আর তা হলো সাইকস-পিকট চুক্তি। সাইকস ছিলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী আর পিকট ছিলেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ১৯১৬ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাইকস-পিকট চুক্তি ছিল এক গোপন কূটনৈতিক চুক্তি, যার মাধ্যমে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যের আরব অঞ্চলগুলোকে কিভাবে ভাগ করে নেওয়া হবে, তা নির্ধারিত হয়। এই চুক্তি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আজকের মধ্যপ্রাচ্যের বহু সংকট ও অশান্তির মূল বীজ রোপণ করে। এই চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতিগত বাস্তবতা উপেক্ষা করে কৃত্রিম সীমারেখায় বিভক্ত করা হয়। যেমন সিরিয়ায় সুন্নী প্রধান দেশে ক্ষমতা দেয়া হয় আলওয়াতিদের হাতে। আবার লেবাননকে এমন ভাবে ভাগ করা হয় যেন সুন্নী, শিয়া আর খিস্টানদের মধ্যে দ্বন্দ লেগে থাকে। এই চুক্তির পর ফ্রান্স পায় সিরিয়া ও লেবাননের নিয়ন্ত্রণ, ব্রিটেন পায় ইরাক ও প্যালেস্টাইন অঞ্চলের প্রভুত্ব, আর প্যালেস্টাইনকে রাখা হয় "আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীন" হিসেবে।  পরবর্তী শতাব্দীতে আমরা দেখি, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান প্রায় সব দেশেই এই কৃত্রিম সীমারেখা গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ ও জাতিগোষ্ঠীগত বিভাজনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। তবে এটা মোটামুটি বলা যায় এই চক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশগলোতে গৃহযুদ্ধ জিইয়ে রাখা যাতে করে ইজরায়েল ঐ অন্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে পারে। পরবর্তীতে আমাদের চ্যানেলে সাইকস-পিকট চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

 ফিরে আসা যাক ফিলিস্তিনে, ১৯২০ সালে জেরুজালেমে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে প্রথম বড় ধরনের দাংগা শুরু হয়। এরপর ১৯২১ সালে জাফায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ইহুদিরা দ্রুতই আমেরিকা খেকে অস্ত্র এনে মিলিশিয়া গঠন শুরু করে। আমেরিাকন ব্যবসায়ী ডেভিড বেনগুরিয়ান এতে সরাসরি সাহা্য্য করেন। যিনি পরে ইজরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।  ১৯২৪ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত চতুর্থ আলিয়াহ-র সময় আরো ৮০,০০০ ইহুদি প্যালেস্টাইনে আসে, যারা পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে বাড়তে থাকা বিদ্বেষ এবং করের চাপ থেকে বাচতে এসেছিল। এই সময় দ্য জিউইশ  এজেন্সি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় যারা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ থেকে শরণার্থী ইহুদিদের ফিলিস্তিনে প্রবেশের অনুমতি প্রদান এবং তাদের মাঝে বৈদেশিক অনুদান বিতরণ করত। এটা মূলত ছিল জায়োনিস্টদের একটি গুপ্ত প্রতিষ্ঠান যার আড়ালে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতো তারা। মোসাদের আদি পিতা ছিল এই সংগঠন।  ১৯২৮ সাল থেকে ইহুদি জাতীয় পরিষদ প্যালেস্টাইনের ইহুদি জনগোষ্ঠীর শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা শুরু করে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি ফাংশন গ্রহণ করে। ১৯৩১ সালে ইর্গুন (Irgun Tzvai Leumi) নামে অধিক আগ্রাসী একটি মিলিশিয়া গঠন করা হয়। এদের কাজ ছিল আরবদের মেরে ঝুলিয়ে রাখা।

১৯৩৩ সালে নাৎসীদের সাথে হাওয়ারা চুক্তির মাধ্যমে ৫০,০০০ জার্মান ইহুদিকে প্যালেস্টাইনে স্থানান্তর করা হয়। এই সময় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে তাদের ধারণার বাইরে ইহুদি ফিলিস্তিনে আসছে। ১৯৩৯ সালের ব্রিটিশদেরা শ্বেতপত্র প্রনয়ণ করে, যেখানে প্যালেস্টাইনে ইহুদি অভিবাসন সীমিত করে ৭৫,০০০ ব্যক্তিতে নিয়ে আসা হয়, এরপর আরবদের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু এতে ইহুদিরা অবৈধ অভিবাসনে লিপ্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে হোলোকাস্টে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদি নিহত হয়। এই সময় অনেক ইহুদি প্যালেস্টাইনে শরণার্থী হিসেবে চলে আসে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সময় ব্রিটেন আরব তেলের ওপর তার নির্ভরতা উপলব্ধি করে। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো ইরাকের তেল নিয়ন্ত্রণ করত এবং ব্রিটেন কুয়েত, বাহরাইন ও আমিরাত শাসন করত। যুদ্ধের পরে, লেবার পার্টি ব্রিটেনে সরকার গঠন করে। যদিও লেবার পার্টির বহু সদস্য প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল, এবং নতুন সরকার ১৯৩৯ সালের ‘শ্বেত পত্র’ নীতি বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবুও তারা ইহুদিদের থামাতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ইউরোপে ব্রীচা নামে একটি গোপন সংগঠন পূর্ব ইউরোপের হলোকাস্ট বেঁচে যাওয়া ইহুদিদের প্যালেস্টাইনের উদ্দেশ্যে সমুদ্রপথে পাচার করত। আরব দেশ থেকেও ইহুদিরা স্থলপথে প্যালেস্টাইনে আসতে শুরু করে। এতে বিশ্বযুদ্ধ শেষে প্যালেস্টাইনের ইহুদি জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩৩% এ পৌঁছায়।

ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা করার জন্য জায়নিস্টরা এরপর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। প্রধান ইহুদি গোপন মিলিশিয়া হাগানাহ ইরগুন (Etzel) ও স্টার্ন গ্যাংয়ের সঙ্গে জোট গঠন করে ‘ইহুদি প্রতিরোধ আন্দোলন’। ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশরা অপারেশন আগাথা চালিয়ে ২,৭০০ জন ইহুদি গ্রেপ্তার করে, যাদের মধ্যে জিউইশ  এজেন্সির নেতারা ছিলেন।

১৯৪৭ সালের ২ এপ্রিল ব্রিটেন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় প্যালেস্টাইন সমস্যা আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়। জাতিসংঘ প্যালেস্টাইন বিষয়ক বিশেষ কমিটি (UNSCOP) গঠন করে, যা প্যালেস্টাইনে গিয়ে ইহুদি ও আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। আরব উচ্চ কমিটি এই বৈঠকগুলো বর্জন করে। ব্রিটিশ বিদেশ সচিব আর্নেস্ট বেভিন নির্দেশ দেন, যে ১৯৪৭ সালে ‘এসএস এক্সোডাস’ নামের একটি জাহাজের যাত্রীদের ইউরোপে ফেরত পাঠাতে হবে। অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে প্রধান অ-জায়নিস্ট অর্থডক্স ইহুদি দল ‘আগুদাত ইসরায়েল’ UNSCOP-কে একটি ধর্মীয় চুক্তির ভিত্তিতে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ রেজোলিউশন ১৮১ (II) পাস করে, যা প্যালেস্টাইনকে স্বাধীন আরব ও ইহুদি রাষ্ট্রে বিভক্ত করার এবং জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিক ট্রাস্টিগশিপের আওতায় আনার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনায় ব্রিটেনকে ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারির আগে ইহুদি অভিবাসন “গুরুত্বপূর্ণ” মাত্রায় অনুমোদন দেওয়ার কথাও বলা হয়।

তবে ব্রিটেন বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ব্রিটেন বিভাজন পরিকল্পনার পরে প্যালেস্টাইনে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের প্রবেশের অনুমতি দেয়নি এবং ১৯৪৮ সালের মে মাস পর্যন্ত ব্রিটিশ ম্যান্ডেট বজায় রেখেছিল ।১৯৪৮ সালের ১৪ মে, ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের শেষ হওয়ার ঠিক আগেই, ডেভিড বেন-গুরিয়নের নেতৃত্বে ইহুদি জাতীয় পরিষদ স্বাধীন ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করে। জাতিসংঘের ১৯৪৭ সালের বিভাজন পরিকল্পনা অনুসারে প্যালেস্টাইন ভূমি ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব থাকলেও, আরব নেতারা এটি প্রত্যাখ্যান করেছিল।

ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলো মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন ও ইরাক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ (১৯৪৮-৪৯) সংঘটিত হয়। যুদ্ধের সময় হাজার হাজার আরব শরণার্থী প্যালেস্টাইন থেকে বিতাড়িত হয় বা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, এই ঘটনাকে আরবরা "নাকবা" (অর্থাৎ "বিপর্যয়" বা "ক্যাটাস্ট্রোফি") নামে পরিচিতি দেয়। প্রায় ৭০০,০০০ থেকে ৯০০,০০০ আরব প্যালেস্টাইনি শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়। নাকবার সময় ইসরায়েলি বাহিনী কিছু গ্রামে পরিকল্পিত গণহত্যা চালায়। যেমন জেরুজালেমের কাছাকাছি দির ইয়াসিন গ্রামে ইরগুন ও লেহি মিলিশিয়ারা হামলা চালিয়ে শতাধিক নিরীহ আরবকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডটি প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও পালানোর কারণ হয়ে ওঠে। আসলে সে সময় আরবদের সেনাবাহিনী বলতে কিছুই ছিল না। অপরদিকে মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত ইহুদিরা ছিল সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ফলে আরবরা পরাজিত হয় আর প্রতিষ্ঠিত হয় আধুনিক ইজরায়েল। যা খেকে আজও অশান্ত মধ্যপ্রাচ্য। 

0 Comments